সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও জলাভূমির বৈচিত্র্য পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ হিসেবে কাজ করছে।
খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ ছয় জেলাজুড়েই সুন্দরবন বিস্তৃত। সাতক্ষীরা ছাড়া অন্য পাঁচ জেলা দিয়ে সুন্দরবনে যেতে নদীপথে প্রবেশ করতে হয়। একমাত্র সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ থেকে সরাসরি সড়কপথে যাওয়া যায়। এজন্য জেলার ব্র্যান্ডিং ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়কপথে সুন্দরবন’।
সম্প্রতি পরিবেশ সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজমের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন ৫১ হাজার ৪৮০ জন দেশি ও ৫০ জন বিদেশি পর্যটক। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবেশ করেছেন ৪০ হাজার ৯১৪ জন দেশি ও ১৮০ জন বিদেশি পর্যটক। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনে প্রবেশের মাথাপিছু ফি ছিল ২১ টাকা ৫০ পয়সা, যা পরে বাড়িয়ে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়।
সুন্দরবন তার বৈচিত্র্যময় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বন্যপ্রাণী এবং পাখি। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাড়ি হিসেবে এই অঞ্চল বিশ্বখ্যাত, যা পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করে। এছাড়া নদী ও খালপথে নৌভ্রমণ এবং কুমির, হরিণ ও বিভিন্ন বিরল পাখির দর্শন পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখছে। সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। একইসঙ্গে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতেও সংশ্লিষ্টরা নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ফলে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। বনের পরিবেশের ক্ষতি না করে এবং প্রাণীদের বিরক্ত না করে পর্যটকদের সচেতনভাবে ভ্রমণ করতে বলা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করছে যাতে পর্যটন এবং বনাঞ্চলের সুরক্ষা দুটোই বজায় থাকে।
শীতকালে, বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময় বনের বায়ু এবং পানি উভয়ই মনোরম থাকে, যা পর্যটকদের জন্য আদর্শ। তাছাড়া, এই সময়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দর্শন লাভের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
সুন্দরবন এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্মতা রেখে ভ্রমণ করলে সুন্দরবন হতে পারে এক অনন্য পর্যটন গন্তব্য।