বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে গর্ব ও চেতনার প্রতিফলন দৃশ্যমান হলেও দেশ নিয়ে তাদের আশাবাদ হারাচ্ছে তরুনরা । বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের আশা ২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ ছিল, ২০২৪-এ তা কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া দেশের ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন। ৫৫ শতাংশ তরুনরা জানিয়েছেন পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক। আবার চাকরির সুযোগ কম থাকায় দেশের তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশাও বেড়েছে।
আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানটির ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ-২০২৪’ গবেষণা সিরিজের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ফলাফলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তৃতীয়বারের মতো এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১০ ও ২০১৫ সালে আরও দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তরুণ বাংলাদেশিদের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি, ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই ব্রিটিশ কাউন্সিল এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ- ২০২৪’ এর ফলাফল এবং সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন এমঅ্যান্ডসি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অব রিসার্চ আইবেক ইলিয়াসভ। তিনি জানান, গবেষণায় নানা শ্রেণিপেশার ১৮-৩৫ বছর বয়সী মোট ৩ হাজার ৮১ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৬ শতাংশ) লিঙ্গ-বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ৪২ শতাংশ তরুণের কাছে বেকারত্ব একটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়। এ ছাড়া ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক, বিশেষ করে সৌদি আরব (২৭ শতাংশ) ও কানাডায় (১৮ শতাংশ)। ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। যেখানে নাগরিক নেতৃত্বের অভাব থাকায় নিজেদের কমিউনিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হন, মাত্র ১৭ শতাংশ তরুণ।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, এই প্রতিবেদন তরুণদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করেছে এবং তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়নে আমাদের সমন্বিত দায়িত্বকেও তুলে ধরেছে। নীতি, বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তা নির্ধারণ করবে কতটা সফলভাবে আগামী প্রজন্ম তাদের সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট শুধু একটি বিশ্লেষণ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্জনগুলোর প্রতিফলন। আমরা আপনাদের কণ্ঠস্বরকে সমর্থন দিতে, শক্তিশালী করতে এবং আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেনো আপনারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারেন যেখানে সকল মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার। পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল অ্যাঙ্গেজমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড ইনসাইটস ডিরেক্টর ক্রিস্টিন উইলসনের পরিচালনায় ‘স্কিলস ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন এডিবির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (শিক্ষা) জয়া চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ জস, ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পরিচালক (সার্টিফিকেশন) শুভ্রা রায় এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব সাসটেইনেবিলিটি সৈয়দা আফজালুন নেসা।
প্রতিবেদনে তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বেশকিছু কার্যকর সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- দক্ষতার ব্যবধান কমিয়ে আনতে ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তৈরি করা, সুশাসন নিশ্চিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, লিঙ্গ-সমতা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করা। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ও সুপারিশগুলো মূল অংশীজনদের জানাতে ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।