নামে কী আসে যায়! কাজই তো সব। কিন্তু সব সময় ব্যাপারটি এমন নয়। কিছু মানুষের নাম শুনেই জানতে ইচ্ছে করে নামটি রাখার পেছনের গল্প। যেমন ধরুন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার নিক্সন ম্যাকলিন। ১৯ টেস্ট এবং ৪৫ ওয়ানডে খেলা এই বোলারের পুরো নাম—নিক্সন অ্যালেক্সি ম্যাকনামারা ম্যাকলিন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নামে তাঁর নামের প্রথম অংশ। অ্যালেক্সি—নামটা রাখা হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি কোসিগিনের নামে। ম্যাকনামারা—নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারার নাম থেকে।
ম্যাকলিন নামটা পারিবারিক। আরেকটু জানিয়ে রাখা ভালো। নিক্সন ম্যাকলিনের এক ভাইয়ের নাম কিসিঞ্জার ম্যাকলিন এবং অন্য ভাইয়ের রিগ্যান ম্যাকলিন। বোনের নাম গোল্ডা মেয়ার ম্যাকলিন। কিছু বোঝা গেল? কিসিঞ্জার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিবিদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রিগ্যান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও হলিউডের অভিনেতা। আর গোল্ডা মেয়ার ছিলেন ইসরায়েলের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরের জগৎ থেকেও ক্রিকেটারদের নাম রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান নিল ফেয়ারব্রাদারের নাম যেমন তাঁর মা রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান নিল হার্ভি থেকে। হার্ভি তাঁর মায়ের পছন্দের ক্রিকেটার ছিলেন। সে যা হোক, যাঁরা জানেন না, তাঁদের ওয়াশিংটন সুন্দর নামটা শুনেও নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জেগেছে এমন নামের রহস্য কী? বিশেষ করে গতকাল পুনে টেস্টে ভারতীয় স্পিনারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ব্যাপারটি আরও একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।
গতকাল টেস্টের প্রথম দিনে নিউজিল্যান্ডের ২৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পেছনে ৭ উইকেট নিয়ে বড় অবদান রাখেন অফ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। সাড়ে তিন বছর টেস্টে ফিরেই প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করেন। তাঁর বাবা মনি সুন্দরও ছিলেন ক্রিকেটার।
তামিলনাড়ুর রঞ্জি দলে সুযোগ পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পারেননি। সে সময় অর্থাৎ সুন্দরের খেলোয়াড়িজীবনে তাঁর এক বয়স্ক প্রতিবেশী ছিলেন—সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া সেই ভদ্রলোকের নাম ছিল পিডি ওয়াশিংটন। তিনি ক্রিকেট খুব ভালোবাসতেন এবং সুন্দরের খেলা পছন্দ করতেন। তামিলনাড়ুর মেরিনা গ্রাউন্ডে সুন্দরের খেলা দেখতেও যেতেন।
পরের গল্পটা এমন—সুন্দরের পরিবার তেমন সচ্ছল না হওয়ায় তাঁর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পিডি ওয়াশিংটন। ক্রিকেট সরঞ্জাম কিনে দিয়েছেন, তাঁর লেখাপড়া নিশ্চিত করতে বইপত্র কিনে দেওয়ার পাশাপাশি স্কুলের ফি–ও দিয়েছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে সেই স্মৃতিচারণা করেছেন মনি সুন্দর, ‘তিনি আমার খেলা দেখতে আসতেন এবং সব সময় উৎসাহ দিতেন। আমার পরিবার খুব একটা সচ্ছল ছিল না, তাই আমি যেন ক্রিকেট না ছাড়ি, সেটি নিশ্চিত করতে জার্সি কিনে দেওয়ার পাশাপাশি যতভাবে সম্ভব সাহায্য করতেন। ক্রিকেট খুব ভালোবাসায় তিনি চাইতেন আমি যেন স্বপ্নের পিছু ছুটি।’
১৯৯৯ সালে পিডি ওয়াশিংটন মারা যান। এর কয়েক মাস পর সে বছরই মনি সুন্দরের স্ত্রী বেশ জটিলতার পর সন্তান প্রসব করেন। মনি সুন্দরের ভাষায়, ‘আমার স্ত্রীর প্রসবটা জটিল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাচ্চাটা বেঁচে যায়। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী, আমি তার কানে ফিসফিস করে সৃষ্টিকর্তার নাম “শ্রীনিবাসন” বলি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিই, আমি ওর নাম ওয়াশিংটনের নামেই রাখব, যিনি আমার জন্য এত কিছু করেছেন।’
ব্যস, এই হলো ওয়াশিংটন সুন্দর নামের রহস্য। গতকাল এই স্পিনার সুন্দর বোলিং করার পর আজ নয়ে ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ছিলেন ১৮ রানে। আজ দ্বিতীয় দিনে ১৫৬ রানে অলআউট হয় ভারত। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থেকে ১০৩ রানে পিছিয়ে রোহিত শর্মার দল।
ওয়াশিংটন সুন্দর ব্যাটিংয়েও বেশ দক্ষ। এই টেস্টসহ মোট ৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩টি ফিফটি আছে। ২০২১ সালে আহমেদাবাদ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আছে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সেঞ্চুরি ২টি।