ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই ঘোষণা ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিবিসির এক সংবাদে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এবং গাজার সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ নেতারা আইসিসির এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ একে ‘ন্যায়বিচার ও মানবতার জন্য একটি অন্ধকার দিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাস ও মন্দের পক্ষে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই সিদ্ধান্তকে ‘ইহুদি-বিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েল মিথ্যা ও অযৌক্তিক অভিযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’ একই সঙ্গে, আইসিসিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক সংস্থা’ বলে উল্লেখ করেছে।
কেনেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ইউলি এডেলস্টেইন এই সিদ্ধান্তকে ‘ইসলামপন্থী স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত একটি রাজনৈতিক সংস্থার লজ্জাজনক পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আইসিসি তার বৈধতা হারিয়েছে।’
হামাস তাদের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে পরোয়ানার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ‘আমরা বিশ্বের সব দেশকে আহ্বান জানাই, তারা যেন আইসিসিকে সহযোগিতা করে এবং ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু ও গালান্তকে বিচারেরে আওতায় নিয়ে আসে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
আইসিসিতে ১২৪টি স্বাক্ষরকারী দেশ রয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যও অন্তর্ভুক্ত। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইসরায়েল এই তালিকায় নেই।
এর মানে, তত্ত্বগতভাবে, নেতানিয়াহু বা গালান্ত যদি কোনো স্বাক্ষরকারী দেশের ভূখণ্ডে যান, তবে সেসব দেশ তাদের গ্রেপ্তার করে আইসিসিতে হস্তান্তর করতে বাধ্য।
তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, আদৌ নেতানিয়াহু বা গালান্তকে কখনো বিচারের জন্য হেগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কিনা।
নেতানিয়াহু সর্বশেষ গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এতে সাক্ষর করেনি তাই তিনি সেখানে নিরাপদেই যেতে পারেন। গত বছর তিনি যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ সফর করেছিলেন, যার অনেকগুলোই আইসিসির সদস্য। তবে এখন তিনি আবার এমন সফর করার ঝুঁকি নেবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, স্বাক্ষরকারী দেশগুলোও এই পরিস্থিতি এড়াতে চাইবে।
হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানা নিয়ে তারা খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। ইসরায়েলের দাবি, তিনি এই বছরই নিহত হয়েছেন, যদিও হামাস এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেয়নি।
হামাসের অন্য দুই নেতা, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও ইসমাইল হানিয়া উভয়ের বিরুদ্ধেই আইসিসি মামলা করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তারা উভয়ই মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবারের এই ঘোষণা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
এই পরোয়ানা নেতানিয়াহু ও গালান্তের উপর সরাসরি প্রভাব ফেললেও, ইসরায়েলের জন্যও সবচেয়ে বড় আঘাত। কারণ এর ফলে, গাজায় দেশটির সামরিক অভিযানকে ন্যায়সংগত হিসেবে দাবির প্রচারে এ সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে।
আইসিসি-এর এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের জনগণ। তাদের মতে বিশ্ব ইতোমধ্যেই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার নৃশংসতা ভুলে গেছে বা তা উপেক্ষা করছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা, বিশেষত গাজাবাসীরা, মনে করছেন তাদের অভিযোগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আইসিসির মতো একটি শক্তিশালী সংস্থার সমর্থন তাদের ন্যায্যতা প্রমাণ করেছে।