রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত ভিসা দেওয়া সীমিত করেছে। জনপ্রিয় এই গন্তব্যের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশে ভিসা পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকদের বিদেশ ভ্রমণে ধাক্কা লেগেছে। তাতে উড়োজাহাজের পাশাপাশি ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসাও কমেছে।
দেশীয় পর্যটকদের বিদেশযাত্রা ৭৫-৮০ শতাংশ কমেছে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও সংকুচিত হয়েছে।
টোয়াবের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য সহজে ভিসা পাওয়ার পাশাপাশি আকাশ ও সড়কপথে যোগাযোগ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের ৪০-৪৫ শতাংশই ভারত যান। এরপরই আছে থাইল্যান্ড। চিকিৎসা, শপিং ও ঘোরাঘুরির জন্য ১৫-২০ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটকের গন্তব্য এই দেশটি। এর বাইরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ১০-১৫ শতাংশ মালয়েশিয়া ও ৫-১০ শতাংশ সিঙ্গাপুরে ভ্রমণে যান। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভ্রমণে যান ১০-১৫ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটক। এ ছাড়া দেশি পর্যটকদের ৫-৮ শতাংশ ইউরোপে, ৫-৮ শতাংশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীন ভ্রমণে যান।
একাধিক ট্যুর অপারেটর জানান, বর্তমানে মালয়েশিয়ার ভিসা সহজ থাকলেও ভিয়েতনাম ৮০ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরের ৭০ শতাংশ ভিসা আবেদন বাতিল হচ্ছে। নেপালের উড়োজাহাজভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন না। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ ইউরোপের ভিসার কাজে। এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ভিসার আবেদন নিতে শুরু করেছে থাইল্যান্ড। শুধু জটিলতা ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে কিছু পর্যটক যাচ্ছেন।
ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর জরুরি চিকিৎসা ছাড়া পর্যটন ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসাও পাচ্ছেন না পর্যটকেরা। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ভিসা পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী ও ভ্রমণপিপাসুরা ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশীয় পর্যটকদের বিদেশযাত্রা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও সংকুচিত হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ থেকে গত বছর ভারতে সর্বোচ্চ পর্যটক যান। ২০১৯ সালে ২৫ লাখ ৭৭ হাজার বাংলাদেশি ভারতে যান। এরপর করোনার কারণে সংখ্যাটি কমলেও ২০২২ সাল থেকে আবার বাড়তে থাকে।
ভারতের ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১২ লাখ ৭৭ হাজার পর্যটকের ২২ শতাংশ আকাশপথে ও বাকিরা সড়কপথে ভারত ভ্রমণ করেন। এই পর্যটকের ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঘুরতে, সাড়ে ২৫ শতাংশ চিকিৎসা এবং ব্যবসা ও পেশাগত কাজে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভারতে যান। গত বছর ২১ লাখ ১৯ হাজার বাংলাদেশি ভারতে যান। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক ভারত ভ্রমণ করেন। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ভারতের তুলনায় কম হলেও বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে বছরে এক লাখের বেশি পর্যটক যান। ভারত ও ইউএইর মতো গন্তব্যে ভিসা সীমিত হওয়ায় থাইল্যান্ডে যেতে চাইছেন অনেকে। তবে অনেকে আবেদন করায় ভিসা পেতে এখন ২০-২৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। আগে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ভিসা মিলত।
ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ১ লাখ ২ হাজার জন বাংলাদেশি থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। গত বছরের একই সময়ে দেশটিতে গিয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার মানুষ। গত বছরের ১২ মাসে দেশটিতে যান ১ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি। এর আগের বছর বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ১০৬ জন।
ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করার পর দেশটির বিভিন্ন গন্তব্য ফ্লাইটের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, দুবাইসহ অন্যান্য গন্তব্যের ফ্লাইটে যাত্রী তুলনামূলক কম হচ্ছে।
বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে কাজ করে এমন ১২৩ ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন দ্য বাংলাদেশ আউটবন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরাম। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ট্যুর অপারেটরদের ৮০ শতাংশ ব্যবসা বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের কাছ থেকে আসে।
পর্যটন সংবাদ/