ভারত পর্যটক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখায় অর্থনীতির সব সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভারত ভিসা না দেওয়ায় টিকিট বিক্রিসহ অন্য কাজে ট্রাভেল এজেন্টদের ৭০ শতাংশ ব্যবসা কমে গেছে। অথচ আগে সারা বছরই ভারতে পর্যটক, ব্যবসায়ীরা যেতেন। এছাড়া চিকিৎসার জন্য কলকাতা, চেন্নাইতেও প্রচুর রোগী যেত বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ।
আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ভারত ভিসা না দেওয়ায় টিকিট বিক্রিসহ অন্য কাজে ট্রাভেল এজেন্টদের ৭০ শতাংশ ব্যবসা কমে গেছে। অথচ আগে সারা বছরই ভারতে পর্যটক, ব্যবসায়ীরা যেতেন। এছাড়া চিকিৎসার জন্য কলকাতা, চেন্নাইতেও প্রচুর রোগী যেত।
আকাশপথে যাত্রী সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলো। দেশের কয়েকটি এয়ারলাইন্স এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার কয়েকটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট কমিয়েও পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ও ভারতের এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমে বলছেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই আকাশপথে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়। এখন ভারত সীমিত আকারে ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারপরও এয়ারলাইন্সগুলোতে যাত্রী সংকট কাটছে না।
আবার যারা ভারতের ভিসা পাচ্ছেন বা আগের ভিসা আছে তাদের অনেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছেন না। কারণ, তারা মনে করছেন এখন বিমানবন্দর দিয়ে ভারত যেতে চাইলে হয়রানি হতে হবে। আওয়ামী লীগপন্থি হলে আটক বা গ্রেফতারেরও ভয় রয়েছে। এমন নানা কারণে ভারতের বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। সংস্থাগুলো ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশও যাত্রী পাচ্ছে না এয়ারলাইন্সগুলো।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার গড়ে ৫০ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সিটগুলো ফাঁকা থাকছে। তবে এসব ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরার সময় কিছুটা বেশি যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সরকারের আমলা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধরতে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। যেমন বোর্ডিং পাস দেওয়া থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশনে প্রত্যেক যাত্রীর কাগজপত্র ও পরিচয় অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা পেশাজীবী, তাদের প্রতিষ্ঠানের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না থাকলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদেরও জেরা করা হচ্ছে। তবে এ কাজে সাধারণ যাত্রী যাতে হয়রানির স্বীকার না হন, সেদিকে সবাই সতর্ক রয়েছেন।
ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লিতে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু এ পথে গড়ে ৫০ শতাংশ যাত্রীও পাচ্ছে না সংস্থাটি। ফলে আগে যেখানে ঢাকা-কলকাতায় ১৪টি ফ্লাইট চলতো এখন সেখানে মাত্র সাতটি ফ্লাইট (দিনে একটি) চলছে। একইভাবে দিল্লিতে আগে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করতো বিমান। এখন সেখানে সপ্তাহে চারটা এবং চেন্নাইয়ে সাতটির জায়গায় তিনটি ফ্লাইট চলছে। এ অবস্থায় পরিচালন ব্যয় তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে বিমান।
পর্যটন সংবাদ/