প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে একটি দেশ বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এবং উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে। উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা বড় আশীর্বাদ। আমরা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর দিকে তাকালেই বিষয়টি বুুঝতে পারবো। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মূলত তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থমূল্য বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের নাম। তালিকাটি তৈরি করেছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট।
১. রাশিয়া
রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। দেশটির বিপুল পরিমাণ কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল এবং বিরল খনিজ ধাতু রয়েছে যা এর অর্থনীতিকে অনেকটা চালিত করে।। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ৭৫ ট্রিলিয়ন বা ৭৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের সমান। রাশিয়ার মূল প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও বিরল খনিজ ধাতু। রাশিয়ার খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটিতে মজুত খনিজের মূল্য ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি ডলার। রাশিয়ায় স্বর্ণেরও বিপুল মজুত আছে। ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট বলছে, বিশ্বে যত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত আছে, তার ২০ শতাংশই রাশিয়ায়।
২. যুক্তরাষ্ট্র
প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থমূল্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ৪৫ ট্রিলিয়ন বা ৪৫ লাখ কোটি ডলার। দেশটির মূল প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে কয়লা, কাঠ, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ ও কপার।
৩. সৌদি আরব
এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে সৌদি আরব। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট মূল্য ৩৪ ট্রিলিয়ন বা ৩৪ লাখ কোটি ডলার। দেশটির মূল প্রাকৃতিক সম্পদ হলো তেল ও কাঠ। মূলত তেল বিক্রি করেই সৌদি আরবের অর্থনীতির উত্থান হয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তেল রপ্তানি করে এই দেশ।
৪. কানাডা
ভৌগোলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পাশাপাশি দেশ। স্বাভাবিকভাবে দুই দেশের ভূপ্রকৃতিও কাছাকাছি। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, কানাডাতেও কমবেশি সেই সব সম্পদ আছে। কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে তেল, ইউরেনিয়াম, কাঠ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও ফসফেট। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট মূল্য ৩৩ ট্রিলিয়ন বা ৩৩ লাখ কোটি ডলার।
৫. ইরান
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো ইরানও তেলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে বেশ ধনী। দেশটির মূল প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে তেল ও গ্যাস। ইরানের প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ২৭ ট্রিলিয়ন বা ২৭ লাখ কোটি ডলার।
৬. চীন
প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থমূল্যে ষষ্ঠ স্থানে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট মূল্য ২৩ ট্রিলিয়ন বা ২৩ লাখ কোটি ডলার। চীনের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে কয়লা, বিরল ধাতু, কাঠ ও তেল। তবে বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতি ও পরাশক্তির তুলনায় চীন প্রাকৃতিক সম্পদে পিছিয়ে আছে।
৭. ব্রাজিল
প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে সপ্তম স্থানে আছে আরেক উন্নয়নশীল দেশ ব্রাজিল। এই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের মোট মূল্য ২২ ট্রিলিয়ন বা ২২ লাখ কোটি ডলার। ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, ইউরেনিয়াম, লৌহ, কাঠ ও তেল।
৮. অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির বড় উৎস প্রাকৃতিক সম্পদ। চীনের শিল্পোৎপাদন ও অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বড় অংশের জোগান দেয় অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে কয়লা, কাঠ, কপার, লৌহ, আকরিক, স্বর্ণ ও ইউরেনিয়াম। তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ২০ ট্রিলিয়ন বা ২০ লাখ কোটি ডলার।
৯. ইরাক
ইরাকের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে তেল ও ফসফেট। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ১৬ ট্রিলিয়ন বা ১৬ লাখ কোটি ডলার।
১০. ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে লৌহ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মোট অর্থমূল্য ১৪ ট্রিলিয়ন বা ১৪ লাখ কোটি মার্কিন ডলার।