বিশ্বজুড়ে দিন দিন আকাশে আকাশে বিমান, মানে উড়োজাহাজের ওড়াউড়ি বাড়ছে । এর সাথে আকাশপথে মানুষেরও ভ্রমণ দিন দিন বাড়ছে। আকাশ পথে স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছানো যায় গন্তব্য স্থলে । আকাশপথে ভ্রমণ সামর্থ্যবানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ফলে বিমান যারা তৈরি করে, তাদের পোয়াবারো।
তবে বিমান তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়, যেনতেন কোম্পানি ও সব দেশের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। সে কারণে পৃথিবীতে বিমান তৈরি করা কোম্পানির সংখ্যা খুবই স্বল্প । এদের মধ্যেও আবার হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।
বিমান বা উড়োজাহাজ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোরই একচ্ছত্র আধিপত্য বলা চলে। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টিই যুক্তরাষ্ট্রের। বাকি ৬ কোম্পানির মধ্যে নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, ভারত, কানাডা, ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়ার একটি করে রয়েছে। পরিসংখ্যানবিষয়ক সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট কোম্পানিসমার্কেটক্যাপ ডট কম থেকে এই তালিকা প্রণয়ন করেছে।
উড়োজাহাজের বাজারে সবচেয়ে বেশি পরিচিত দুটি নাম হচ্ছে এয়ারবাস ও বোয়িং। এয়ারবাস নেদারল্যান্ডসে তালিকাভুক্ত, তবে এটির কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে। ফলে অনেকেই মনে করেন, এয়ারবাস ফরাসি কোম্পানি। বাণিজ্যিক ও সামরিক—উভয় ধরনের বিমানই তৈরি করে এয়ারবাস। আর বোয়িং হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি।
বাজার মূলধনের দিক থেকে এখন বিশ্বেও শীর্ষ তিনটি কোম্পানির মধ্যে দুটি হচ্ছে এই এয়ারবাস ও বোয়িং। কিন্তু এই তালিকায় প্রথম নামটি হলো মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের। আজ বুধবার সকালে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৩০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন বা ১৩ হাজার ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
১৯৯৫ সালের মার্চে লকহিড করপোরেশন ও মার্টিন ম্যারিয়েট্টা কোম্পানি একীভূত হয়ে লকহিড মার্টিন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে। যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক বিমান নির্মাণের ক্ষেত্রে লকহিড মার্টিন বিশ্বের প্রথম সারির কোম্পানি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের ‘এফ সিরিজের’ যুদ্ধবিমান তৈরি করে তারা।
বাজার মূলধনে দ্বিতীয় স্থানে আছে নেদারল্যান্ডসের এয়ারবাস। এই কোম্পানির বাজার মূলধন ১২০ দশমিক ১২ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ১২ কোটি ডলার। গতকাল এই কোম্পানির শেয়ারের দাম অবশ্য শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে।
উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজার মূলধন হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের। গতকাল তাদের বাজার মূলধন ছিল ৯৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার। গতকাল এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। বিমানের নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন সমস্যায় চলতি বছর বোয়িংয়ের বাজার মূলধন ৩৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে। ফলে ২০১৭ সালের পর চলতি বছরেই বোয়িংয়ের বাজার মূলধন এই প্রথম ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে।
চতুর্থ স্থানে আছে ভারতীয় কোম্পানি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস, যদিও তৃতীয় স্থানে থাকা বোয়িংয়ের সঙ্গে তাদের বাজার মূলধনের ফারাক অনেক বেশি। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকসের বাজার মূলধন ৩৪ দশমিক ০১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪০১ কোটি ডলার। গতকাল এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকসের ১৯ বিলিয়ন ডলার কম বাজার মূলধন নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে আছে আরেক ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন। তাদের বাজার মূলধন ১৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫৯২ কোটি ডলার। গতকাল তাদের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। এরা বাণিজ্যিক ও সামরিক—উভয় ধরনের বিমান তৈরি করে। এই কোম্পানি বিশ্বখ্যাত সামরিক বিমান রাফায়েল তৈরি করে।
বাজার মূলধনে ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সট্রন। এরা সামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান তৈরি করে। তাদের উৎপাদিত অন্যান্য পণ্য হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, পরিষেবা বিমান ও জরিপ বিমান। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিশেষ কাজের জন্য উপযোগী উড়োজাহাজ তৈরি করে তারা।
টেক্সট্রনের বাজার মূলধন ১৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫৪৪ কোটি ডলার। গতকাল এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
৭ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন বা ৭৩৪ কোটি ডলারের বাজার মূলধন নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে কানাডার কোম্পানি বোম্বার্ডিয়ার। গতকাল তাদের শেয়ারের দাম কমেছে দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি বছর কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর বেড়েছিল ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
অষ্টম স্থানে থাকা ব্রাজিলের এমব্রেয়ারের বাজার মূলধন চার বিলিয়ন বা ৬ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন বা ৬৩৭ কোটি ডলার। গতকাল এই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে দশমিক ৯৩ শতাংশ। চলতি বছর ব্রাজিলীয় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮২ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে বেড়েছিল ৭১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
তালিকার ৯ম স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি কোরিয়া অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের বাজার মূলধন ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন বা ৪২১ কোটি ডলার। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির বাজার মূলধন অবশ্য ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জোবি এভিয়েশন আছে ১০ম স্থানে। আজ তাদের বাজার মূলধন ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা ৩৯৮ কোটি ডলার। গতকাল তাদের শেয়ারের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে চলতি বছর মার্কিন এই কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যদিও গত বছর ১২২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছিল।