সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড সিস্টেমে বিন অ্যাটাকের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ব্যাপক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রাহকেরা। তবে ‘অ্যাটাকের’ খবরটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছিলো ব্যাংকটি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের কিছু ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে বেআইনিভাবে লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানতে পেরেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর ফলে নতুন করে আবার গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডধারী গ্রাহকেরা বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড থেকে ডলার উধাও হওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কল দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রহিমকে। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংটির এ কর্মকর্তা পর্যটন সংবাদের প্রতিবেদককে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বলেন, এত রাতে এসব বিষয়ে জানতে কেন কল দিয়েছেন? আমি এবিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। এরপর তিনি কল কেটে দেন।
ব্যাংকের কার্ডধারী গ্রাহকরা বলছেন, কয়েকদিন আগে ব্র্যাক ব্যাংকের ডুয়েল কার্ডেন্সি কার্ড থেকে ডলার কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিলো। এমন অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এতে আমরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে জানিয়েছিলো সব ঠিক আছে।
এখন আবার নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে বেআইনিভাবে লেনদেন হওয়ার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে নতুন করে আবার আতঙ্ক বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন কয়েকটি ব্যাংকের কার্ডধারীরা।
তারা বলছেন, কোন ব্যাংকের কার্ডে ঝুঁকি বেশি, সেগুলোর নাম প্রকাশ করলে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। এখন আরও দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় এসকল সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত দেশের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের হয়রানি করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপি সাইবার আক্রমনের প্রবনতা বেড়েই চলছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আরও বলছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতেও সাইবার আক্রমনের প্রবনতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ম্যালওয়ার আক্রমনের শিকার হচ্ছে।
সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, সম্ভাব্য ডেটা লঙ্ঘন বা র্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্ষেত্রে অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সহ সিভিভি যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি লেনদেনের জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার করতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া ভূয়া কিউআর কোড সম্পর্কে ব্যাংক কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যেকোনো আর্থিক লেনদেনের জন্য 2FA/MFA ব্যবহার করুন। অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করতে এআই এবং মেশিন লার্নিং (যদি সম্ভব হয়) ব্যবহার করুন। বেশি সংখ্যক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যে নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সাথে বিনিময় করা বিন ডেটার পরিমাণ সীমিত করা এবং অননুমোদিত অ্যাক্সেস এড়াতে এটি নিরাপদ করতে বলা হয়। একইসঙ্গে কীভাবে সম্ভাব্য বিন (BIN) সনাক্ত করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় সে সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে নিয়মিত সফ্টওয়্যার এবং সিস্টেম আপডেট করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইট এবং আমরা ভিত্তিক সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
পর্যটন সংবাদ/