রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিতে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সহকারী মহাব্যবস্থাপক থেকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান জায়েদ বখত ও সাবেক এমডি শামস- উল-ইসলাম মিলে এমন দুর্নীতি করেছেন। আর এ দুজনেই বিগত সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন।
অগ্রণী ব্যাংকের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালকে ভিত্তি ধরে ২০২৪ সালে সহকারী মহাব্যবস্থাপক হতে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এই পদোন্নতিতে ব্যাপক জাল জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে অথবা দুর্নীতিতে সহায়তাকারীদের পদোন্নতি প্রদান করার জন্য বছরের শুরুতেই পদোন্নতির নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
অগ্রনী ব্যাংক কর্মচারী প্রবিধান মালা-২০০৮ এ বলা আছে,পদোন্নতি জৈষ্ঠতা, মেধা এবং পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দেয়া হবে। শুধুমাত্র জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে কেউ পদোন্নতি দাবী করতে পারবেনা। ইতিপূর্বে ২০২৩ সালের পদোন্নতির নীতিমালায় একথা উল্লেখ করা ছিলো। শুধুমাত্র দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যেই ২০২৪ সালের নীতিমালায় এই ক্লজ তুলে দেয়া হয়। সিরিয়ালি সিনিয়রদের একতরফাভাবে প্রমোশন দেয়া হয়। যা প্রবিধানমালার লংঘন।
এর আগে মেধায় ৭০ শতাংশ এবং সিনিয়রটি ৩০ শতাংশ ধরে প্রমোশন দেয়া হতো। এছাড়া এসাইনমেন্ট, কম্পিউটার টেস্ট এবং ভাইভায় আলাদাভাবে পাশের নিয়ম থাকলেও গত ২ থেকে ৩ বছর যাবৎ শুধুমাত্র দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যে গড় নম্বর প্রদান করা হয়, যাতে করে কেউ কম্পিউটার টেস্ট বা এসাইনমেন্টে খারাপ করলেও ভাইভায় নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেশি নম্বর প্রদান করে তাকে পদোন্নতি প্রদান করা সহজ হয়। কারন কম্পিউটার টেস্টের নম্বর কারসাজি করলে ভবিষ্যতে ফরেনসিক পরীক্ষা করে কারসাজির বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব।
এছাড়াও প্রদত্ত এসাইনমেন্ট দেয়া হয় কোন শ্রেনীকৃত ঋণের উপর। যারা প্রমোশন পেয়েছে তাদের অধিকাংশের ঋণ সংক্রান্ত কোন ধারনা নেই। জুনিয়র কিংবা কোন কলিগকে দিয়ে এসব এসাইনমেন্ট তৈরি করিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আগেরবছরের অন্যকারো দাখিলকৃত এসাইনমেন্ট কপি করে জমা দেয়া হয়েছে। যা পূণরায় দক্ষ ব্যাংকার দ্বারা পরীক্ষা করা হলে বা ভাইভা নেয়া হলে প্রমাণ করা সম্ভব।
শুধুমাত্র ভাইভায় দুর্নীতি করলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। একারনে যারা সিন্ডিকেট করে অর্থ প্রদান করেছে তারা কম্পিউটার টেস্ট এবং এসাইনমেন্টে খারাপ করলেও ভাইভায় বেশি নম্বর প্রদান করে তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য বলছে, পুরা পদোন্নতি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় অর্থের বিনিময়ে অথবা যারা অর্থ প্রদান করেনি তারা চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এবং বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্ভাবক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলামের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, এসব অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। উলটো পদোন্নতির ক্ষেত্রে হওয়া অনিয়মগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে আমি সক্ষম হয়েছিলাম।
জানা গেছে, ডাঃ ইন্দিরা চৌধুরিকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় সরাসরি পিও হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে পদ্ধতি কর্মচারী প্রবিধানমালা অনুসরন করার কথা তা করা হয়নি। এ ধরনের নিয়োগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এগুলোর কোনকিছুই অনুসরন না করে ইন্দিরা চৌধুরিকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে তাকে পিও হিসাবে নিয়োগ প্রদানের সাথে পরপর তিনটি প্রমোশন প্রদান করে ডিজিএম বানানো হয়। এর ফলে অগ্রণী ব্যাংকের সাধারন অফিসারদের একটি পদ নষ্ট করা হয়।
এদিকে সিএডির বর্তমান ডিজিএম ওমর ফারুক। তিনি ওয়েটিং তালিকা থেকে পদোন্নতি পাওয়া। তিনি সিংগাপুর এক্সচেঞ্জ হাউসে থাকার সময় সরাসরি চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এবং এমডি শামস উল ইসলামের অর্থ পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে তাঁকে নারী ঘটিত কেলেংকারির সাথে জড়িত থাকার কারনে ম্যানেজমেন্ট সেখান থেকে দেশে ফেরত আনতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তাকে প্রধান কার্যালয়ের সিএডিতে পোস্টিং দেয়া হয়। একইসাথে সাবেক চেয়ারম্যান এবং এমডির পুঁজিবাজারের লেনদেনও তিনি মেইনটেইন করেন বলেও জানা গেছে।
আরও জানা যায়, গুলশান কর্পোরেট শাখায় এজিএম হিসেবে কর্মরত শরমিন আখতার। গুলশান শাখার যাবতীয় অনিয়মের সাথে যুক্ত তিনি। সাবেক চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এবং এমডি শামস উল ইসলামের যাবতীয় অপকর্মের সঙ্গী শাহীনূর বেগমের তল্পিবাহক বিধায় তার নামও অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে।
এছাড়াও ব্যাপক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত মোঃ মশিউল ইসলাম। তিনি শিল্প ঋণ বিভাগের এজিএম হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতির কারনে ম্যানেজমেন্ট তাকে খুলনায় বদলী করতে বাধ্য হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।