দ্রুতগতির জলযান জেট স্কিতে চড়ে উত্তাল সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ধারণ করছিলেন বরিশালের উজিরপুর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আল মামুন হাওলাদার (৩২)। জলযানে সাগর দাপিয়ে বেড়ার মুহূর্তে তিনি ছিটকে পড়েন। অথই জলে তাঁকে ডুবতে দেখে তীরে থাকা স্বজনেরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। নিমেষে তাঁদের আনন্দভ্রমণ বিষাদে রূপ নেয়। লাইফ গার্ড কর্মীরা মামুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় এই যুবকের জীবন।
গত ২১ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এই দুর্ঘটনার শিকার হন মামুন। এ সময় তাঁর গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। মামুনের মতো ভ্রমণে এসে অসতর্ক অবস্থায় সাগরে নেমে প্রতিনিয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকেরা। গত তিন সপ্তাহে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে মামুনসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৫ মাসে এ সংখ্যা ১২।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উত্তাল সাগরে নির্দেশনা না মেনে ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামছেন পর্যটকেরা। এতে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনার শিকার বেশির ভাগ কিশোর ও যুবক।
সৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীদের সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, ‘উত্তাল সাগরে বিচরণ ও গোসলে নামতে পর্যটকদের সতর্ক করে বালিয়াড়িতে লাল নিশানা ওড়ানো হয়। জোয়ার-ভাটার সময় সাগরে নামতে কী কী নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, সেসব লেখা একাধিক সাইনবোর্ড রয়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। পাশাপাশি বিচ কর্মী, লাইফগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সতর্ক করে থাকেন। কিন্তু পর্যটকদের বড় একটি অংশ নির্দেশনা মানতে চায় না; বিশেষ করে কিশোর, তরুণ ও যুবকেরা। এতেই ঘটছে দুর্ঘটনা।’
সবশেষ গত শনিবার দুপুরে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী থেকে সৈকতে এসে ছয় বন্ধুসহ গোসলে নেমে মাহমুদুল হাসান (১৬) নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মারা যায়। তারা সৈকতে ফুটবল খেলে গোসলে নেমেছিল।
সৈকতে গোসলে নেমে বিপদে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে কাজ করা সি সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তিনটি পয়েন্টে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাঁদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। দুই শিফটে কাজ করেন ২৭ জন। এ সময়ে সাগরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও গুপ্তখাল সম্পর্কে পর্যটকদের ধারণা দেওয়া এবং গোসলে নামা লোকজনের ওপর নজর রাখা হয়।
সি সেইফ লাইফগার্ডের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৬ বছরে সমুদ্রসৈকতে ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ সময় তারা সাত শতাধিক মানুষকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছে।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ভ্রমণে এসে পর্যটকের মৃত্যু কোনোভাবে কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের জন্য ‘সুইমিং জোন’ গড়ে তোলার দাবি রয়েছে। কিন্তু সৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর এ নিয়ে খুব একটা নজর নেই।
সাগরে ডুবুরি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসনের নিয়োগ করা ৩৮ বিচ কর্মীর পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা রয়েছেন। সবাই ঝুঁকিCox or নিয়ে গোসলে নামা পর্যটকদের সতর্ক করে থাকেন।’