কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণের সরকারি সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন দ্বীপবাসী। তারা এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে নভেম্বর মাসে পর্যটক যেতে পারবে, তবে রাত্রিযাপন করতে পারবে না। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২ হাজার জন পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। তখন সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে সাড়ে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। দ্বীপের ৮০ শতাংশ মানুষ পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এই দ্বীপের অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র। বছরে তিন-চার মাস পর্যটক এই দ্বীপে আসে। পর্যটন মৌসুমের আয় দিয়ে সারা বছর জীবিকা নির্বাহ করেন দ্বীপের মানুষ। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা সীমিত করা হয় তাহলে এখানকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঝুঁকিতে পড়বে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। তাই সরকারের এমন সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা দরকার বলে তিনি জানান।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ‘সী প্রবাল’ রিসোর্টের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, বছরের তিন-চার মাস দ্বীপে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। এই তিন-চার মাসের মধ্যেও দ্বীপে পর্যটক আসা সীমিত করলে পর্যটক ব্যবসায়ী, হোটেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতে মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুট দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতির সিদ্ধান্ত আসেনি। এই রুট দিয়ে পর্যটক আসা-যাওয়া করতে পারলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নভেম্বরের শুরুতে ইনানী জেটিঘাট দিয়ে পর্যটকবাহী দুটি জাহাজ চলাচল করবে। এতে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আশানুরূপ পর্যটক আসতে পারবে। সেন্টমার্টিনে পর্যাপ্ত পর্যটক না এলে দ্বীপের মানুষকে সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সরকারের হঠাৎ এ রকম সিদ্ধান্তে আমরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছি।
ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। আমাদের দ্বীপ নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে সেটি দ্বীপের জনগণের স্বার্থে হতে হবে। সেন্টমার্টিনের সাড়ে ১০ হাজার মানুষ ও ২ হাজার পরিবারকে সরকার কোনো পুনর্বাসন না করে হঠাৎ এ দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রীযাপন বন্ধ ও পর্যটক সীমিতকরণ সিদ্ধান্ত দ্বীপবাসীর জন্য একটি অশনিসংকেত।