দেশের পর্যটন শিল্প এগিয়ে নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালার সংস্কার এবং ট্যুর অপারেশন কার্যক্রমে মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী পর্যটন আন্দোলন পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে বৈষম্যবিরোধী পর্যটন আন্দোলন পরিষদ আয়োজিত ‘বৈষম্যবিরোধী পর্যটন চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিশন হলিডেজের ম্যানেজিং পার্টনার মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডদের কার্যক্রম পরিচালনা, পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন, ২০২১’ জাতীয় সংসদে সালে অনুমোদিত হয়েছে। এই আইনের ১৭ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চলতি বছরের ২৮ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিধিমালা, ২০২৪’।
তিনি আরও বলেন, পর্যটন শিল্পের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল— পর্যটনবান্ধব আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং প্রকৃত পেশাজীবীরাই বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু আইন ও বিধিমালার বেশ কয়েকটি ধারা আমাদের হতাশ করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে আমরা শঙ্কিত বোধ করছি। এই আইন ও বিধিমালার বেশ কয়েকটি ধারা বাংলাদেশের পর্যটন-শিল্প সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অনেকে ক্ষেত্রেই স্বার্থবিরোধী ও সাংঘর্ষিক।
শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিধিমালা, ২০২৪’- এর ৩ নম্বর ধারায় (নিবন্ধনের জন্য আবেদন) বলা হয়েছে— নিবন্ধনের আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে জমির মালিকানা দলিল, অথবা ভাড়ার চুক্তিপত্রের অনুলিপি এবং প্রারম্ভিক ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ১০ লাখ টাকা স্থিতির ব্যাংক সনদ দিতে হবে। এ ছাড়া ৫ নম্বর ধারা (নিবন্ধন সনদ প্রদান ও মেয়াদ) অনুযায়ী, আবেদনকারীকে ৫১ হাজার টাকা নিবন্ধন সনদ ফি ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে ৩ লাখ টাকার জামানতও দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক অনুমোদন বা লাইসেন্স নেওয়ার জন্য একজন ট্যুর অপারেটর বা ট্যুর গাইড বা পর্যটন উদ্যোক্তার কমপক্ষে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার এককালীন আর্থিক সক্ষমতা থাকতে হবে।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান বাস্তবতায় হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ পর্যটন-উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীর পক্ষে এই শর্ত বাস্তবায়ন বা অনুসরণ করা একেবারেই অসম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক হাজার পর্যটন উদ্যোক্তা, পর্যটন গাইড ও পেশাজীবী রয়েছেন, যাদের এই বিপুল অঙ্কের আর্থিক জামানত ও ব্যাংক স্থিতির সনদ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। পর্যটন-উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ঠিকানা থাকলেও, ট্যুর গাইডদের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও অফিস পরিচালনা করার আর্থিক সক্ষমতা খুবই সীমিত।
তিনি বলেন, পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে যে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে তাদেরই বিপন্ন করবে। এ ধরনের বাস্তবতা-বিবর্জিত আইন ও বিধির প্রয়োগ নিশ্চিতভাবে পর্যটন-উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে এবং ব্যবসায়িক ও পেশাগত অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।
পর্যটন সংবাদ/